সুতা বা চুল পেঁচিয়ে আঁচিল ঝরালে কী হয় জানেন

 সুতা বা চুল পেঁচিয়ে আঁচিল ঝরানো: এটি কি নিরাপদ?

আঁচিল এক প্রকার চর্মরোগ, যা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) দ্বারা সৃষ্ট হয়। অনেক সময় গ্রামাঞ্চলে বা কিছু প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী আঁচিল অপসারণের জন্য সুতা বা চুল দিয়ে বেঁধে রাখার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর পেছনের ধারণা হলো, আঁচিলে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দিলে সেটি শুকিয়ে ঝরে যাবে।

কীভাবে কাজ করে?

এই পদ্ধতিতে সুতা বা চুল দিয়ে আঁচিলের গোড়া শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে আঁচিলের রক্তনালীগুলোতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত ও পুষ্টির অভাবে আঁচিলের কোষগুলো মারা যায় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে ঝরে পড়ে।

এর সম্ভাব্য ঝুঁকি ও জটিলতা

সুতা বা চুল পেঁচিয়ে আঁচিল অপসারণের চেষ্টা বেশ কিছু গুরুতর ঝুঁকি বহন করে:

 * সংক্রমণ: এটি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। যখন আঁচিলের রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন টিস্যু মারা যেতে শুরু করে। এই মৃত টিস্যু ব্যাকটেরিয়ার জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে, যা গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। সংক্রমণের ফলে ব্যথা, ফোলাভাব, লালচে ভাব এবং পুঁজ হতে পারে।

 * রক্তপাত: সুতা বা চুল দিয়ে আঁচিলকে টানলে বা জোরে বাঁধলে রক্তপাত হতে পারে।

 * দাগ: এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আঁচিলের স্থানে স্থায়ীভাবে বিশ্রী দাগ তৈরি হতে পারে।

 * ব্যথা: রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আঁচিলের টিস্যুতে ব্যথা হতে পারে, যা বেশ তীব্র হতে পারে।

 * আঁচিলের পুনরাবৃত্তি: অনেক সময় এই পদ্ধতিতে আঁচিল সম্পূর্ণরূপে অপসারণ হয় না, ফলে পুনরায় একই স্থানে বা আশেপাশের এলাকায় আঁচিল দেখা দিতে পারে।

 * ভাইরাস ছড়ানো: ভুলভাবে আঁচিল অপসারণের চেষ্টা করলে ভাইরাস শরীরের অন্যান্য অংশে বা অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

পেশাদার চিকিৎসা বনাম ঘরোয়া পদ্ধতি

চিকিৎসকদের মতে, আঁচিল অপসারণের জন্য সব সময় পেশাদার চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। আধুনিক চিকিৎসায় আঁচিল অপসারণের জন্য অনেক নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে, যেমন:

 * ক্রায়োথেরাপি (Cryotherapy): এই পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে আঁচিলকে ঠাণ্ডা করে জমাট বাঁধা হয়, ফলে আঁচিলের কোষগুলো মারা যায়।

 * ইলেক্ট্রোকাউটারি (Electrocautery): উচ্চ তাপমাত্রার বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহার করে আঁচিল পুড়িয়ে ফেলা হয়।

 * লেজার সার্জারি (Laser Surgery): লেজার রশ্মি ব্যবহার করে আঁচিল অপসারণ করা হয়, যা তুলনামূলকভাবে কম আক্রমণাত্মক।

 * সার্জিক্যাল এক্সিশন (Surgical Excision): ছোটখাটো আঁচিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে অপসারণ করা হয়।

 * রাসায়নিক পিল (Chemical Peels): কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আঁচিলের উপরের স্তরটি ধীরে ধীরে অপসারণ করা হয়।

আপনার স্বাস্থ্যই আপনার সম্পদ

মনে রাখবেন, ত্বকের যেকোনো সমস্যায় একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ঘরোয়া পদ্ধতিতে আঁচিল অপসারণের চেষ্টা করার আগে এর ঝুঁকির কথাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুন। আপনার ত্বক এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, কারণ এটি আপনার অমূল্য সম্পদ।

যদি আপনার আঁচিল নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকে, তাহলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টালি খাতা

খুলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

পানির পাম্পের যাবতীয় সমস্যার সমাধান।